সরকরি নজরুল কলেজ, সাতপাড়, গোপালগঞ্জ

Government Nazrul College, Satpar, Gopalganj

News:

Welcome to Government Nazrul College

 

কলেজ পরিচিতি

গোপালগঞ্জ জেলার সাতপাড় গ্রামে ১৯৬৭ সালে স্বর্গীয় বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের উদ্যোগে সাতপাড়, সাহাপুর, বৌলতলী, সিংগা, করপাড়া, কদমবাড়ি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার গণ্যমান্য বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সার্বিক সহযোগিতায় সরকারি নজরুল কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তানী  শাসনামলে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সীমিত আকারের অবকাঠামো প্রথম অধ্যক্ষ বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের দৃঢ় নেতৃত্বে একদল তরুণ শিক্ষাব্রতী শিক্ষকবৃন্দকে নিয়ে এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় এবং প্রায় ছয় দশক কাল ধরে বাংলাদেশের শিক্ষাজগতে কলেজটি নবজাগরণ ঘটিয়ে চলেছে। উচ্চশিক্ষা সমাপন করে যে সকল তরুণ শিক্ষকবৃন্দ অর্থের মোহ ত্যাগ করে বিনা বেতনে এলাকার তরুণদের উচ্চ শিক্ষাদানের লক্ষ্য নিয়ে কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালে যোগদান করেছিলেন তারা হলেন- ১. জনাব শ্যামলাল বিশ্বাস, সংস্কৃত ২. জনাব নকুল চন্দ্র হীরা, হিসাববিজ্ঞান ৩. জনাব জাহিদুজ্জামান, দর্শন ৪. জনাব অধীর রঞ্জন খান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ৫. জনাব সুবল সখা সেন, অর্থনীতি ৬. জনাব হীরালাল বালা, ইতিহাস, ৭. জনাব যতীন্দ্রনাথ দাস, হিসাবজ্ঞিান, ৮. জনাব অমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, ইংরেজি বিভাগ। কলেজ প্রতিষ্ঠায় এ সকল শিক্ষানুরাগী গুণী শিক্ষকবৃন্দের অবদান চিরস্মরণীয়। আজ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান সুদৃঢ় এবং বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণে আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

কলেজটি সাতপাড় গ্রামের কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের দানকৃত .০৮ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিতযে সকল সহৃদয় ব্যক্তিবর্গ কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভূমি দান করেছিলেন তাঁরা হলেন- . জলধর কীর্ত্তনীয়া  . কিরণ চন্দ্র কীর্ত্তনীয়া . অতুল চন্দ্র কীর্ত্তনীয়া, সর্ব পিং দীননাথ কীর্ত্তনীয়া . চিত্তরঞ্জন কীর্ত্তনীয়া, পিং রাসবিহারী কীর্ত্তনীয়া ৫. নিত্যরঞ্জন কীর্ত্তনীয়া, পিং চক্রধর কীর্ত্তনীয়া ৬. সুধীর চন্দ্র বিশ্বাস ৭. হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস . হরবিলাস বিশ্বাস ৯. হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ১০. ইতেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ১১. অসীম কুমার বিশ্বাস ১২. সুরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ১৩. বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস ও ১৪. দিগি¦জয় বিশ্বাস মহাত্মাগণ কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালে সাতপাড় গ্রামের সুরেন্দ্রনাথ বালা, মহারাজ বিশ্বাস, ব্রজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, নিশিকান্ত বালা, ডা. সারদা প্রসাদ বিশ্বাস, লালবিহারী বালা, শ্যামলাল বিশ্বাস, পাটিকেলবাড়ি গ্রামের মহেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, গোয়াল গ্রামের হীরালাল বালা, করপাড়া গ্রামের পুলিনবিহারী বিশ্বাস, বনগ্রামের মধুসূদন রায় চৌধুরী, সিংগা গ্রামের চুনিলাল সরকার এবং কালিভিটা গ্রামের মনোরঞ্জন বিশ্বাস মহাশয়গণের অবদান চির-স্মরণীয় এছাড়া নাম জানা-অজানা বহুশিক্ষাবিদ গুণীজন কলেজটির প্রতিষ্ঠালগ্নে আর্থিক অনুদান ও কায়িক শ্রম প্রদানসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন আশেপাশের এলাকার শিক্ষিত ও নিরক্ষর বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কলেজের পুকুর থেকে মাটি কেটে ভিটা তৈরি করে তার উপর টিনের ঘর নির্মাণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছিলেন আজ সেখানে আধুনিক পাকা ভবন নির্মিত হয়েছে তাদের এই অবদান এলাকার মানুষের হৃদয়ে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকা কর্তৃক প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে১৯৮৮ সালের ১৮ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এই কলেজে আগমন করেন এবং কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় কলেজটিকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেনতিনি যে মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে কলেজটিকে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছিলেন কলেজ মাঠে আজও সেই ঐতিহাসিক মঞ্চটি ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছেবর্তমানে সরকারি নজরুল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা; স্নাতক (পাস কোর্স) পর্যায়ে কলা ব্যবসায় শিক্ষা এবং ২০১৪ সাল থেকে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে বাংলা বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে ভবিষ্যতে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে আরও কয়েকটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকারের সাথে সামিল হয়ে কলেজের প্রতিটি স্তরে পাঠদানকে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিন্যস্ত করা হয়েছেবর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১৬টি বিষয়ে পাঠদান করা হয় এবং প্রতিটি বিষয়ে একাধিক মেধাবী, দক্ষ যোগ্য আদর্শ শিক্ষক-কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের সবাই বিসিএস কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কয়েকজন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী কর্মরত আছেনবর্তমানে কলেজে ৩০জন শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মরত আছেন 

আজ কলেজে ছেলেমেয়েরা তিন তলা বিশিষ্ট ০১টি এবং দ্বিতল বিশিষ্ট ০২টি পাকা ভবনে সুন্দর পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে প্রতিটি ক্লাসরুমকে আধুনিক ক্লাসরুমে রূপান্তর করা হয়েছে যেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক বেঞ্চ হোয়াই্ট বোর্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছেকলেজে একটি সমৃদ্ধশালী গ্রন্থাগার রয়েছে যেখানে বাংলা, ইংরেজি ভাষা সাহিত্যসহ বিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ ধর্মীয় বিভিন্ন ধরণের প্রায় দশ হাজারের উপরে বই আছেছাত্রদের জন্য একটি পাকা ছাত্রাবাস রয়েছে যেটি ভেঙ্গে ছয়তলা বিশিষ্ট একটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে পুরানো মন্দিরটি সংস্কার করে সম্প্রতি দর্শনীয় পাকা মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে প্রতি বছর হিন্দু শিক্ষার্থীরা আড়ম্বরপূর্ণভাবে সরস্বতী দুর্গাপূজা করে থাকে 

কলেজের প্রবেশ দ্বারে উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০২৪ সালে অনিন্দসুন্দর একটিরবীন্দ্রমঞ্চনির্মাণ করা হয়েছে যেখানে কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে মঞ্চটি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ শে মার্চ তারিখে তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর রেবতী মোহন সরকার উদ্বোধন করেন আমার ছাত্রজীবনের স্মৃতিবিজড়িত কলেজের পবিত্র প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র মঞ্চটি নির্মাণের পরিকল্পনা ও ডিজাইন নিজ হাতে করার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর রেবতী মোহন সরকার স্যার আমাকে সার্বিক সহযোগিতা পৃষ্ঠপোষকতা দান করায় মঞ্চটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নির্মিত এ মঞ্চটি সরকারি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বাংলাভাষা সাহিত্য চর্চায় অনুপ্রেরণা দান করে চলেছে পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরালচিত্র এ চিত্রটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালচিত্রের সামনেই রয়েছে স্বর্গীয় বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এর একটি ভাস্কর্য সরকারি নজরুল কলেজটি প্রতিষ্ঠায় তার অবদান সর্বজন স্বীকৃততাঁর স্মৃতিধন্য কলেজে ছাত্র হিসেবে অধ্যয়ন এবং বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করার সুযোগ পাওয়ায় আমি গর্ববোধ করি মাঠ প্রাঙ্গণে স্থাপিত সুদৃশ্যমান শহীদ মিনারটি বাহান্নের ভাষা আন্দোলনে মাতৃভাষা বাংলার জন্য শহীদদের মর্মান্তিক স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা মমত্ববোধকে জাগ্রত করে তোলে 

কলেজ ক্যাম্পসে নয়নাভিরাম ফুলের বাগান ও দৃষ্টিনন্দন পুকুর পাড়ে আম, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, বেল, জাম্বুরাসহ বিভিন্ন ফলের গাছ এবং চিরহরিৎ মেহগনি বৃক্ষের সুশীতল ছায়াঘেরা প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ কলেজের সৌন্দর্যবহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে যা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেসরকারি নজরুল কলেজের লক্ষ্য হলো- শিক্ষার্থীদের মানবতাবোধের মন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করা এবং রোভার স্কাউট ও বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা, নৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম, সহনশীলতা সহমর্মিতার গুণাবলিকে জাগ্রত করা এই কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে রাজনীতি ও খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জাতীয় আন্তর্জাতিক স্তরে অনন্য মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারে এবং পুঁজিবাদের কঠোর প্রতিযোগিতা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয় শুধু ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ করে দেয়া নয়, অনগ্রসর জনপদের শিক্ষার্থীদের শারীরিক মানসিক বিকাশসাধন এবং জ্ঞানচর্চার এক উৎকৃষ্ট আদর্শ বিদ্যাপীঠ হিসেবে সরকারি নজরুল কলেজ আলোকবর্তিকার ন্যায় পথ দেখাতে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে

-সঞ্জিৎবল

সহকারী অধ্যাপক

 অর্থনীতি বিভাগ

 

Contact Information

Government Nazrul College

Address: Satpar, Gopalganj Sadar, Gopalganj

Email : nazrulcollege@gmail.com